Description
এইখানটাতে সেদিন দুপুরবেলায় আইবেক্সরা চড়ে বেড়াচ্ছিল। এই উঁচুতে পাহাড়ের কোলে একটা প্রাকৃতিক সুরঙ্গ তৈরি হয়েছিল। শব্দ শোনা যায়, সুরঙ্গটির মধ্যে কোথাও তলদেশ থেকে প্রস্রবণ উঠে কলকল ঝরঝর করে বয়ে গিয়ে ওই মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সেই জলে প্রাণ সঞ্জীবনী অথবা পাহাড়ের ম্যাজিক খনিজ মেশান ছিল।
সেদিন দুপুরবেলায় আইবেস্করা চড়ে বেরাচ্ছিল। সুরঙ্গের এদিকের মুখের গোড়ায় আলগা ছড়িয়ে ছিল চক্র আঁকা কতগুলো নুড়ি। ছাগলদের দলপতির খুরের চাট খেয়ে হটাৎ একটা অদ্ভুতদর্শন নুড়ি লাফিয়ে উঠে ঢুকে গেল সেই সুড়ঙ্গে। তারপর শব্দ জাগল বলিষ্ঠ হাতে কে যেন জল টেনে টেনে সাঁতরে যাচ্ছে।
আর কী আশ্চর্য! প্রাচীন এলিক্সার অফ লাইফ বা সঞ্জীবনী জলধারা পেরোনো এক সাঁতারে নুড়িটি বদলে গেল প্রাণীতে। নুড়িটা ঢুকেছিল সুরঙ্গের এই মুখ দিয়ে আর যখন ও মুখ দিয়ে বেরোল তখন সে নুড়ি নেই, হয়ে গেছে একটি বাঁদর। জল ঝরছে তার ভেজা শরীর থেকে, গায়ের বাদামি রঙের লোম পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যবান। সে পিটপিট করে একবার চারদিকে তাকাল। তারপর হাতের তালু দিয়ে কপালের জল পুঁছল। অবাক হয়ে মাথার ওপরে আকাশ, আর পাশে বনের দিকে তাকাল। তাঁর দুটো হাত দুটো পা কীভাবে ব্যবহার করবে স্পষ্ট করে বুঝতে পারছিল না। তারপর শেষে চার হাতে পায়ে হেঁটে সামনের দিকে এগুল।
নুড়িপাথর কী করে বাঁদর হয়ে যায়? এও কি সম্ভব? কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব কালে সবই হত। মহাভারতের শুরুতেই আছে, রাজা উপরিচর বসুর রাজধানীর কাছে শুক্তিমতী নদী ছিল। কোলাহল নামে পর্বত এই নদীর গর্ভে এক ছেলে আর এক মেয়ে উৎপন্ন করে। রাজা উপরিচর এই মেয়েটিকে তাঁর রানি করেন। সেকালের প্রথাগত বংশধারা অনুযায়ী এই মহিলাই হলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসের দিদিমা। মহাভারতের সময়ে যদি এসব ঘটতে পারে তবে এখনই বা ঘটবে না কেন?
দু বার উপ উপ করে ডাকল নুড়ি বাঁদর, যেন দেখল গলার আওয়াজ ঠিক আছে কিনা। হিমানীরেখাও দু হাজার ফুট ওপরে বড় গাছ প্রায় নেই, বেঁটে গুল্ম আর পাথরের খাঁজে ফাটলে গুচ্ছ ঘাস। সেখানে দুপুরের পরই শীত নামে, ঝোড়ো বাতাস বয়। শীতে নুড়ি বাঁদরের গায়ের রোম খাড়া হয়ে উঠেছে। যেন স্বভাবের নির্দেশে বা বাঁদরির খোঁজে সে নীচের বনের দিকে নামতে লাগল।