Description
আত্মবিস্মৃত বাঙালির দৈনন্দিন যাপনের মধ্যেই প্রকাশিত হয়ে ওঠে, ইতিহাস-চেতনার অসচেতনতা! অতি দুর্বল অস্তিত্ব-চেতনা বা সাংস্কৃতিক-চেতনা নিয়েও তার অহমিকার সীমা নেই৷ মেকি আড়ম্বরের প্রসাধনে ক্রমশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে তার শিকড়, তার সংস্কৃতি—- আরও সুস্পষ্ট করে বললে লোকসংস্কৃতি।
বাংলার লোকসংস্কৃতির বিপুল সমুদ্র মন্থন করলে উঠে আসে পরম্পরা ও ঐতিহ্যের অমৃতপাত্র। যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক হল কর্মসঙ্গীত।
কর্মই জীবন। আর কর্মের মধ্যে লুকিয়ে আছে পরিশ্রম। শ্রম লাঘব একঘেঁয়েমি দূর করতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গুনগুন করে ভিন্ন আঙ্গিকের সুর, তাল, ছন্দ। নিজের আঞ্চলিক, ভৌগোলিক, ভূ-প্রকৃতি, অনুকূল ও প্রতিকূল অবস্থানের মধ্যে বসবাস করতে করতে সেই সুর-তাল-ছন্দে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে রচিত হয়েছে গান। কর্মের মধ্যে থেকে এই গান শ্রমলাঘব তো করেই, আনন্দের সঙ্গে কাজটির পরিসমাপ্তিও ঘটায়। এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় শ্রমজীবী মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা ধরা পড়েছে তাদের ‘নিজস্ব’ গানে গানে।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অথবা বিলুপ্তপ্রায় তিন শতাধিক কর্মসঙ্গীত সংকলিত করার কঠিনতম কাজটি করেছেন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক শৈবাল মুখোপাধ্যায়। কর্মসঙ্গীতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা যাপনের গভীর অর্থ এবং আর্থ-সামাজিক-ভাবনার বিশ্লেষণ সম্ভবত এই প্রথম।