Description
রবীন্দ্র-পরবর্তী সময়ের চল্লিশের দশকের বাংলা আধুনিক কবি সমর সেন ( ১৯১৬—১৯৮৭) এক বাঁক ফেরা কবি-নাম। পিতামহ দীনেশচন্দ্র সেন আর পিতা অরুণচন্দ্র সেন— সমর সেন সেই কিংবদন্তি পরিবারেরর যোগ্য উত্তরসূরী। রবীন্দ্র সমকালের নতুন কাব্যযুগের প্রবর্তক এই শহরের সাধ-আহ্লাদ, ন্যাকামি, ভণ্ডামি, জীবন-যন্ত্রণা, ধূর্ততা, ধীমত্তার প্রীতিহীন নৈরাশ্যের রূপকার। অধীত মার্কসবাদ, আর বাবু-সংস্কৃতির ক্ষয়িষ্ণু উত্তরাধিকার দ্বন্দ্বে দ্বিধান্বিত, তবুও শ্রেণিচ্যুত হননি। কবি তাঁর জীবনের সবটুকু সংযম এবং কৃচ্ছতার নির্যাস নিংড়ে সময়পারের ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছেন মগ্ন-চৈতনিক নৈবেদ্য। তাঁর কবিতা একাধারে নিজের শ্রেণি পরিচয়ের সঙ্গে অসুখী মধ্যবিত্ত শহরজীবীর অসুখী আলেখ্য। কবি নিজেই আত্মকথক, স্রষ্টা- দ্রষ্টা এবং বক্তা, নিজের উপরেই করেছেন ক্রোধ ধিক্কার-ঠাট্টা। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) থেকে ‘গ্রহণ’ (১৯৪০), ‘নানাকথা’ (১৯৪২), ‘খোলাচিঠি’ (১৯৪৩), ‘তিনপুরুষ’ (১৯৪৪) পর্যন্ত ক্ষুদ্রকায় কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়ে মাত্র সাত বছরেই বাংলা কবিতার অভিরুচি পালটে দিয়েছিলেন। মনন শুশ্রূষার চরম হাতিয়ার এই সাধের কবিতার রাজ্য থেকে হঠাৎই বিদায় নিলেন সমর সেন। চার দশক পরবর্তী দশকগুলিতে তাঁর উত্তরসূরি বাংলা কাব্যভুবনে এসেছেন, তারই সুলুক সন্ধান প্রয়াস এই গ্রন্থে।