Description
“…হিন্দু এলিট জীবনানন্দ বরিশাল থেকে কলকাতায় এসে যে-কালচার শক-এর কথা তাঁর ছত্রে ছত্রে লিখেছেন, যেভাবে নিজেকে কলকাতার উপযোগী করে তুলেছেন অতি বেদনায়—তাও আর এক গবেষণার বিষয়। এ জন্যে আমাদের তাঁর লেখা কবিতাগুলিকে পড়তে পড়তে, বারবার ‘reading between the lines’ করার জন্য তাঁর বহুল পরিমাণল গদ্যের শরণাপন্ন হতে হবে। জীবনানন্দকে কেন ‘করেচ’ ‘খেয়েচি’ করে অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তকে চিঠি লিখতে হতো, রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখবার সময়ে নিজের ইংরেজি সাহিত্যের জ্ঞান আওড়াতে হতো, কেনই-বা তিনি লিখেছিলেন ‘পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি’? এসবকিছু দেখলে মনে হয়, কেমন যেন ‘চেনা চেনা’। আবার অন্যদিকে, রূপসী বাংলা-র জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠার সময়টা রূপসী বাংলা লেখার সময় থেকে এত দূরবর্তী কেন? ১৯৩২-৩৩ খ্রিস্টাব্দে, বরিশালে, দিনের পর দিন এক ঘোরের মধ্যে বসে লিখে যাওয়া এই একগুচ্ছ সনেটধর্মী লেখা ছাপবার জন্য উপযুক্ত সময় কেন তখনই পাননি মুখচোরা ও বাঙাল এই কবি! আর যে-বাঙালিকে রূপসী বাংলা বিপুলভাবে মথিত করে নিজেই এক মিথ হয়ে উঠল ১৯৫২-র দিকে, সে-বাঙালি কি মূলত পূর্ববঙ্গ থেকে উৎপাটিত, স্বদেশ হারানোর শোক ও নস্ট্যালজিয়াবিধুর হিন্দু শিক্ষিত বাঙালি নয়? রূপসী বাংলা-র শব্দসংকলনের চূড়ান্ত হিন্দু অনুষঙ্গগুলির গ্রহণযোগ্যতা কি এঁদের কাছে যথেষ্টই আমোঘ ছিল না? এসব বিষয়ে আরও পড়াশুনার প্রয়োজন ছিল, আছে। আমাদের কাছে যে-জীবনানন্দ কবি জীবনানন্দ হয়ে কবিতা দুনিয়ায় আমোঘ ইনস্টিট্যুট হয়ে আছেন, দু:খের বিষয়, তিনি মানুষ জীবনানন্দ নন। মানুষ হবার অনেক ফ্যাকড়া। মানুষ হলেই রাজনৈতিক প্রাণী হয়ে যেতে হয়। কেননা, ব্যক্তিগতই হল রাজনৈতিক। The personal is political।”