Description
বাংলা সাহিত্যপত্রের দুনিয়ায় ‘কলকাতা’ পত্রিকার দ্রুতি সম্ভবত অরোরা বোরিয়ালিস-তুল্য। গত ছয় ও সাতের দশকের অধিকাংশ চোখ ধাঁধানো লেখারই দেখা আমরা পেয়েছি এই ‘কলকাতা’র পাতায়। প্রতিষ্ঠিতকে ছিঁড়েখুঁড়ে আধুনিকতাকে। প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্নই দেখেছিল সে। কলকাতা। স্বপ্ন। দেখেছিল বাংলা লেখালেখিকে আরো দু-পা এগিয়ে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাবার, যেখান থেকে সময়কে চিনে নিতে কোনো অসুবিধে হবার কথা নয়।বুদ্ধদেব বসু এই নামটি বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতার সমবয়সী। তাঁর সাহিত্যকীর্তি একদিক থেকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি আনুপূর্বিক ইতিহাসই কেবল নয়, এমনকী তুমুল বিতর্কের ইতিহাসও বটে। কিন্তু এতো গেল বুদ্ধদেবের একটিমাত্র পরিচয়। তাঁর ছোটগল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাস অনুবাদকর্ম আর চিঠিপত্রের ভেতরে ও বাইরে তিনি যে আত্মপরিচয়কে আস্তে আস্তে মেলে ধরেছিলেন, এ-পরিচয়ে তাঁকে পুরোপুরি পরিচিত করা কেবল কঠিনই নয় খানিকটা অসম্ভবও বটে। অসম্ভব কারণ, তিনি কেবল নিজের লেখালেখি নিয়েই ব্যাপৃত থাকেননি, যেটা থাকাই স্বাভাবিক ছিল। তাঁর পক্ষে, বদলে তিনি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সম্পাদনায়, শিক্ষকতায়। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সম্পাদনার সেই ব্যাপকতর আদর্শ, যার সামনে এখনো প্রায় মাথা নিচু হয়ে আসে বাংলা সাহিত্য পত্রিকার যে-কোনো সম্পাদকের। তিনিই শিখিয়েছিলেন ….. কীভাবে বিচিত্র পথগামী সৃষ্টিশীলতাকে রাজনৈতিক বা দার্শনিক মতবাদের সঙ্গে বনিবনা না হলেও জায়গা করে দিতে হয়। শিখিয়েছিলেন কীভাবে মনের জানলা খুলে বরণ করে নিতে হয় সৃষ্টির দুনিয়াকে। মৃত্যুর প্রায় তিন দশক কেটে যাবার পরেও বুদ্ধদেব বসু তাই বাঙালি পাঠকের কাছে একটি নাম, যার ঔজ্জ্বল্য বোধকরি কখনো মুছে যাবার নয়।এই জায়গা থেকেই, আজ নয়, সেই কবেই প্রবাদতুল্য ‘কলকাতা’ পত্রিকা, একটা নয়, তার দু- দুটো বিশেষ সংখ্যার বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপ্রতিম এই ব্যক্তিত্বকে। ‘৬৮- ৬৯ এবং ‘৭৪ থেকে আজ, প্রায় তিন-তিনটে দশক কাটিয়ে আসার পরেও, কী আশ্চর্য, ঐতিহাসিক এই দুটি সংখ্যা—যার একটি বুদ্ধদেব বসুর ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে এবং অপরটি তাঁর জীবনাবসানে প্রকাশিত—তাদের কোনো লেখার শরীরেই কোনো বয়সের ছাপ নেই। সাময়িক পত্রিকার দুটি ঐতিহাসিক সংখ্যার বই আকারে পুনর্জন্ম বাংলা প্রকাশনার ইতিহাসে এই প্রথম।”