Description
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, যিনি একাধারে সাহিত্য অনুরাগী এবং নাট্যকার, সুস্থ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, ব্যক্তিত্বের অমিত আভা, অন্যদিকে বঙ্গ রাজনীতির সবচেয়ে বিতর্কিত (সম্ভবত) দুটি অধ্যায়ের যুগপুরুষ। যাঁর দুধসাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে প্রতিফলিত হত বঙ্গসংস্কৃতির গৌরব। রবীন্দ্রনাথের বিশ্ববোধ ও বিশ্বভ্রমণ যেমন তাঁর প্রবন্ধে ছায়া ফেলেছিল, তেমনই বিশ্বসাহিত্যের বেশ কিছু কবিতার অনুবাদগুচ্ছ ‘চেনা ফুলের গন্ধ’ উপহার দিয়েছিলেন বাঙালিকে। আবার তিনিই মার্কস ও মার্কেজকে এক বিন্দুতে মিলিয়েছেন। একদিকে ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যত’ স্লোগানকে সামনে রেখে সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা, শালবনিতে এশিয়ার বৃহত্তম ইস্পাত কারখানা, নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব, রঘুনাথপুরে ইস্পাত কারখানার পরিকল্পনায় বাংলার যুবমানসে যেমন বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তিনি; অন্যদিকে রিজুয়ানুরকাণ্ডে প্রশাসনিক অতিসক্রিয়তা, ধনঞ্জয়ের ফাঁসি, দিনহাটায় ফ্রন্টশরিকদের ওপরে গুলিচালনা, সূঁচপুর হত্যাকাণ্ড এবং ‘অপারেশন সানসাইন’-এর মতো নিকষ কালো ঘটনাগুলির মাধ্যমে তাঁকে কালিমালিপ্ত করার প্রচেষ্টাও হয়েছে। যে মানুষ একসময় ঘৃণাভরে তাঁকে আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলেছিল, আজ তাদের ভ্রান্তিবিলাস ঘুচে গেছে। তাঁর অতি সাধারণ যাপন, সৎ ভাবমূর্তি এবং প্রখর মেধাই আজ তাঁকে পুনরায় প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। তিনি একাধারে নন্দিত এবং নিন্দিত। এই গ্রন্থে সংকলিত চিঠিগুলিতে উঠে এসেছে দিনের প্রথম আলোর চেয়েও সত্য—- গঠনমূলক সমালোচনা, অভিনিবিষ্ট অভিযোগ, সুপ্ত অভিমান এবং অবশ্যই অতিপ্রাসঙ্গিক বহু প্রশ্ন। ‘খোলা চিঠি’ বামপন্থায় আস্থা রাখা উঠতি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদেরও আয়নার মুখোমুখি দাঁড় করানোর আন্তরিক প্রয়াস, তা বলাই যায়।